গণ-অর্থায়ন বা ক্রাউডফান্ডিং ফিল্ম প্রযোজনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু কথা

Posted by Kaahon Desk On November 18, 2020

সমাজজীবনে সংস্কৃতিকে টেকসই উন্নয়নের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি কীভাবে সমস্ত সম্ভাব্য আর্থিক সংস্থানকে সংযুক্ত করতে পারে তা বর্তমানে বিশেষ মনোযোগ দাবী করছে। চলচিত্র প্রযোজনার প্রচলিত “ব্যবসায়িক সিনেমা মডেল” সফলতম মডেল হিসেবে ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু এই মডেলে কতগুলি অশুভ দিক বা শুভবুদ্ধির অভাব থেকেই যায়। আর সে কারণেই বারবার চলচিত্রের ইতিহাসে প্রযোজনার অর্থ সংগ্রহ বা লগ্নিতে অন্য পথ খোঁজা হয়েছে এবং তার মধ্যে কয়েকটি সাময়িকভাবে সাফল্যও পেয়েছে। বস্তুত সেইসব ছোট ছোট সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমার কয়েকটি অন্যধারার ব্যবসায়িক মডেলও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা সিনেমা শিল্পকে যে সামগ্রিকভাবে নতুন মাত্রা দিয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। ইউরোপে ফিল্ম প্রোডাকশন জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় উপকৃত হয়। ফিল্ম প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করতে বড় পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয় এবং প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় এই সমর্থন অপ্রতুল প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে এটি বিকল্প আর্থিক সংস্থান হিসেবে চিহ্নিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমাদের এদেশেও গণ-অর্থায়ন বা ক্রাউডফান্ডিং সম্প্রতি সমস্ত সৃজনশীল-সাংস্কৃতিক শিল্প এবং বিশেষত চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্য অর্থ সংগ্রহের বিকল্প মডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে ও কিছু সফল নিদর্শনও তৈরী হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টাগুলি হল-

১. Manthan (1976) Shyam Benegal

২. “I AM” (2010) by Sanjay Suri and Onir

৩. Greater Elephant (2012) by Srinivas Sunderrajan

৪. Lucia (2013) Pawan Kumar

৫. Kothanodi (2015) by Bhaskar Hazarika

৬. Placebo (2015); a hybrid media, documentary film by Abhay Kumar

৭. WADE (2016-pending)

৮. Fading Clouds (2017) by Suman Majumder

৯. Nedunalvaadai (2019) by Selvakannan

আরো কিছু উদাহরণ আছে নিশ্চই। আমাদের জানালে বাধিত হব।

Previous Kaahon Cinema Update:

ক্রাউডফান্ডিং হল একটি বিকল্প অর্থায়ন পদ্ধতি এবং এটিকে এমন প্রকল্পগুলিতে ব্যবহার করা উচিত যা প্রচলিত অর্থায়ন বা লগ্নি পদ্ধতিতে গ্রাহ্য হবে না। কারণ, এইধরণের প্রকল্প বা প্রচেষ্টার কোন নির্দিষ্ট সফল উদাহরণ পরিষ্কার ভাবে থাকে না। গবেষণা এবং উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি, সামাজিক এবং মানবিক কারণ এই ধরণের সৃজনশীল-সাংস্কৃতিক শিল্প-প্রচেষ্টাগুলির মূল চালিকা শক্তি হয়ে থাকে যা লগ্নিকারীদের কাছে যথেষ্ট ভরসাযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয় না। অথচ জাতীয় ও আঞ্চলিক স্তরে সামগ্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে (inclusive development) এই সৃজনশীল-সাংস্কৃতিক শিল্পগুলির প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

ক্রাউডফান্ডিং ফিল্মমেকিং সাধারণত কিছু কৌশলগত উদ্দেশ্য অনুসরণ করে যেমন-

১. সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ বা আলোচনার একটি প্রেক্ষিত তৈরী করা।

২. সৃজনশীলতাকে অনুঘটক হিসেবে কাজে লাগিয়ে সংস্কৃতি প্রচার।

৩. সম্প্রদায় বা জাতির সামগ্রিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে সংস্কৃতি প্রচার করা।

৪. সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি।

৫. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রচার।

৬. সৃজনশীল-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে শক্তিশালীকরণকে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের নজরে আনার চেষ্টা।

চলচ্চিত্র শিল্প এবং সৃজনশীল-সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্মকে অর্থনীতির অংশ হিসাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এটি আপাতভাবে অমূলক মনে হলেও এইসব ক্রিয়াকর্ম উপরে বর্ণিত কৌশলগত লক্ষ্যগুলির বাস্তবায়নে অবদান রাখে। তাছাড়া এটি ফলপ্রসূ হওয়াও সম্ভব এবং এই লক্ষ্যমাত্রাগুলি মূল্য সংযোজন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দেশ বা জাতিসমূহের ভাবমূর্তির উন্নতিকরণ ও প্রচার, সচেতনতা বৃদ্ধি, সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।

অনুদান ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং সমর্থনকারী কোন দাতব্য প্রকল্প অনুদানের আকারে একটি পরোপকারী পরিবেশ তৈরী করে। সহায়তার বিনিময়ে উৎপাদন কোনরকম আর্থিক পুরষ্কার লাভের আশা না করেই হয়ে থাকে যা সমাজজীবনে একটি দৃষ্টান্ত তৈরী করে।

আজকের Web মাধ্যমে, মূলত সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভিডিও সম্বলিত ওয়েবসাইটগুলির সহযোগে ক্রাউডফান্ডিং ফিল্ম প্রযোজনার সফলতা প্রমাণিত হয়েছে এবং এতে শিল্পের ক্ষেত্রটি ছাড়িয়ে পড়েছে । এর ফলে মানবজাতি লিঙ্গ ভারসাম্য, আন্তঃসাংস্কৃতিক এবং জাতিগত বৈচিত্র্যের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। দেশগুলির সীমানার বাইরে সৃষ্টির বিতরণকে সহায়তা করেছে। বিশ্বের যেকোন জায়গায় অবস্থিত সিনেমা-অনুরাগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থায়নের মডেলটি সরাসরি কাজে না লাগলেও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ও জাতির সামগ্রিক বিকাশে কাজে লেগেছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক- গ্রিসে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের চেয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীতে তৈরি র‌্যাডিকাল ডকুমেন্টারিগুলির প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ডকুমেন্টারিগুলি মূলত ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমেই নির্মিত হয়েছে। তাই অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে  পর্যুদস্ত গ্রিসের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে ক্রাউডফান্ডিং প্রচেষ্টাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মূলধারার মিডিয়াগুলির একাজে প্রায় ব্যর্থ হয়েছে বলাই যেতে পারে। তুর্কি দেশে ক্রাউডফান্ডিং চলচ্চিত্র প্রযোজনার বিষয়গুলি বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের চারপাশে ঘোরাফেরা করে। স্বাধীনতা অর্জন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে সামাজিক বা রাজনৈতিক লক্ষণগুলির পর্যালোচনা করা হয় এই চলচিত্রগুলির মাধ্যমে যা তুর্কি দেশের সামগ্রিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হয়। অন্য কথায়, সমাজের উপরের স্তর থেকে আসা প্রচলিত লগ্নি ও নীচ থেকে তৈরী হওয়া অর্থায়ন – এই দুই পদ্ধতির সহাবস্থান শিল্পচর্চাকে এক ধরণের ভারসাম্য দেয়, যা সভ্যতার বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রাউডফান্ডিংয়েরও একটি প্রচারমূলক ভূমিকা রয়েছে এবং সক্রিয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে সম্মিলিত জ্ঞান এবং বুদ্ধি প্রয়োগ করে। কোন ধারণা বা প্রকল্পের আশেপাশে একটি সমর্থন সম্প্রদায় তৈরি করে। সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া অনুসরণ করে পণ্য-পরীক্ষা করে পরবর্তী উৎপাদন প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এতে পণ্যের গুণমান উন্নত হতে পারে।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার আড়ংঘাটা ও তার সংলগ্ন কিছু গ্রামের মানুষ পরিচালক উজ্জ্বল বসুর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ ক্রাউডফান্ডিং ফিল্ম প্রযোজনার মডেলে “দুধপিঠের গাছ” নাম একটি সিনেমা নির্মাণ করেছে। নিচের ভিডিওতে রইলো এই সিনেমা তৈরির ইতিবৃত্ত। আমাদের অনুভবে আড়ংঘাটা অঞ্চলকে বাংলার সিনেমা গ্রাম বলে অভিহিত করা অত্যুক্তি হবে না বলে মনে করি।

Uro Khoi
Uro Khoi is a casual banterer with reference to cinema. You can take him seriously or just pass him off as an exhibitionist. The choice is yours!

 

Read this review in English.

ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন।

 

 

Related Updates

Comments

Follow Us

Show Calendar

Message Us